ঈদুল ফিতর করণীয় ও বর্জনীয় কাজসমূহ
ঈদুল ফিতর মুসলিমদের জন্য আনন্দের দিন। এটি রমজানের রোজার পর আল্লাহর উপহার। এই দিন শুধু উৎসব নয়, এটি ইবাদতের সুযোগ। এটি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ও ভালো কাজ করার দিন। ঈদুল ফিতর ত্যাগ ও মানবতা শেখায়। এই দিনে কিছু কাজ করার আছে, কিছু নিষেধ আছে। এগুলো জানা ও মানা জরুরি।
- ঈদের দিনে কিছু কাজ করা ভালো
- ঈদুল ফিতরের দিনে খাবার ও পোষাক
- ঈদুল ফিতরের দিনে কিছু কাজ পরিহার করা উচিত
- শেষ কথা
আজ আমরা আলোচনা করব ঈদে কী করা উচিত, আর কী করা উচিত নয়। ‘ঈদ’ মানে আনন্দ, ‘ফিতর’ মানে রোজা ভাঙা। এক মাস রোজা রাখার পর ঈদ আসে। এই দিনে রোজা ভেঙে আনন্দ করা হয়।
নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, "প্রত্যেক জাতির আনন্দ আছে। মুসলিমদের আনন্দ হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।" ঈদ আল্লাহর দয়া ও রহমতের দিন। এই দিনে সবাই সহানুভূতি দেখায়। আল্লাহর কাছে আসার চেষ্টা করে।
ঈদের দিনে কিছু কাজ করা ভালো
নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো:
ফজরের নামাজ জামাতে পড়া দরকার। ঈদের দিন ফজরের নামাজ দিয়ে শুরু করা ভালো। নবী (সা.) ও সাহাবিরা জামাতে নামাজ পড়তেন।
গোসল করে পরিষ্কার থাকা সুন্নত। সুন্দর কাপড় পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা নবীর (সা.) পছন্দ ছিল। এতে মন ভালো থাকে, ঈদ সুন্দর হয়।
ঈদের আগে ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। এটা গরিবদের জন্য দান। তারা যেন আনন্দে ঈদ করতে পারে। ফিতরা দিলে রোজার ভুলগুলো মাফ হয়। আমরা আল্লাহর দয়া পাই।
ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদের নামাজ ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহ বা বড় মসজিদে দুই রাকাত ঈদের নামাজ পড়া সুন্নত। ঈদের নামাজের পর খুতবা শোনা ভালো কাজ। এতে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়। ঈদের জামাতে মুসলিমদের ঐক্য দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ রোজার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা ও মানবজীবনে এর প্রভাব।
তাকবির বলা ঈদের দিন তাকবির বলা সুন্নত। তাকবির হলো: اللّهُ أَكْبَرُ، اللّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللّهُ، وَاللّهُ أَكْبَرُ، اللّهُ أَكْبَرُ، وَلِلّهِ الْحَمْدُ এর মানে, “আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য।” ঈদের দিন ফজরের পর থেকে ঈদের নামাজ পর্যন্ত এই তাকবির বলা ভালো।
খাওয়া-দাওয়া ও মিষ্টান্ন গ্রহণ ঈদের দিন নামাজের আগে মিষ্টি কিছু খাওয়া সুন্নত। নবীজি (সা.) ঈদের দিন খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। এটা প্রমাণ করে যে ঈদের দিন রোজা রাখা যায় না।
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ঈদের দিনে একে অপরকে ঈদ মোবারক বলা সুন্নত। সাহাবীরা বলতেন, "তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম"। এর অর্থ, "আল্লাহ আমাদের ও আপনার কাজ কবুল করুন।" এতে সম্পর্ক ভালো হয় ও ভালোবাসা বাড়ে।
আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর ঈদের দিন আত্মীয়, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সাথে দেখা করা সুন্নত। তাদের বাড়িতে যাওয়া, খোঁজখবর নেওয়া ও আনন্দ ভাগ করে নেওয়া ভালো কাজ। এতে পরিবারের ও সমাজের বন্ধন শক্ত হয়।
গরিবদের সাহায্য করা ঈদুল ফিতর সবার জন্য আনন্দের দিন। তাই গরিবদের সাহায্য করা দরকার। তাদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া উচিত। যারা ফিতরা পেয়েছে বা পায়নি, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা ও উপহার দেওয়া ভালো।
বেশি দোয়া ও ইবাদত ঈদের দিন বেশি দোয়া করা ও নফল নামাজ পড়া ভালো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা উচিত। এই দিনে আল্লাহর জন্য সময় দেওয়া দরকার। জিকির, কুরআন পড়া ও ভালো কাজ করা সওয়াবের কাজ।
ঈদুল ফিতরের দিনে খাবার ও পোষাক
ঈদুল ফিতর মুসলিমদের জন্য আনন্দের দিন। এটি এক মাস রোজা রাখার পর আসে। এই দিনে সবাই খুশি হয়, যেন পুরস্কার পেল। ঈদের সকালে ঈদগাহে যাওয়ার আগে কিছু মিষ্টি খাওয়া ভালো। খেজুর বা অন্য কিছু মিষ্টি হতে পারে। এটা রোজা ভাঙার প্রতীক। ঈদের নামাজ শেষে সবাই কোলাকুলি করে।
বন্ধু ও আত্মীয়দের সাথে মিষ্টিমুখ করে। ঈদের দিনে ঘরে ঘরে ভালো খাবার তৈরি হয়। সেমাই, পায়েস, জর্দা ও পোলাওয়ের মতো খাবার রান্না করা হয়। সবাই একসাথে বসে খায়।
আরো পড়ুনঃ শালীনতার বিপরীত কোনটি ।
তারা একে অপরের খবর নেয়। ঈদ উৎসবে পোশাকের গুরুত্ব আছে। রাসূল (সা.) ভালো পোশাক পরতেন। তিনি সাহাবাদেরও নতুন বা পরিষ্কার পোশাক পরতে বলতেন। তাই সুন্দর পোশাক পরা সুন্নত।
শিশুরা নতুন জামা পেয়ে খুব খুশি হয়। এতে ঈদের আনন্দ বাড়ে। ধনী-গরিব সবাই পরিষ্কার পোশাক পরার চেষ্টা করে। ঈদের পোশাক সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। খাবার ও পোশাক ঈদকে বিশেষ করে তোলে। এটি সমাজে ভালোবাসা বাড়ায়।
ঈদুল ফিতরের দিনে কিছু কাজ পরিহার করা উচিত
নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো:
ঈদের নামাজ ত্যাগ করা: অলসতা করে অনেকে ঈদের নামাজ পড়েন না, যা গুনাহের কাজ। ঈদের নামাজ ওয়াজিব। তাই, এই নামাজ অবশ্যই আদায় করা উচিত।
অহংকার করা: নতুন পোশাকে বা ধনের গর্ব করা অনুচিত। ঈদের দিনে বিনয়ী থাকা জরুরি। আল্লাহ অহংকারীদের অপছন্দ করেন।
অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়া: গান বাজনার নামে অশ্লীলতা করা গুনাহের কাজ। ঈদের দিনে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা উচিত।
আরো পড়ুনঃ পুডিং বানানোর নিয়ম।
গরিবদের অবহেলা করা: ঈদের দিনে গরিবদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তাদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিন। ঈদ সহানুভূতি শেখায়।
অপচয় করা: অনেকে খাবার ও পোশাকে বেশি খরচ করেন, যা অপচয়। ইসলাম অপচয় পছন্দ করে না। তাই, ঈদের দিনে অপচয় পরিহার করুন।
ঝগড়া করা: ঈদের দিনে ঝগড়া করা বা সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত নয়। ঈদ শান্তি ও মিলনের বার্তা দেয়।
জিকির থেকে দূরে থাকা: ঈদের আনন্দে অনেকে আল্লাহর জিকির ভুলে যান। ঈদের দিনে জিকির করা জরুরি।
শেষ কথা
ঈদুল ফিতর শুধু আনন্দের দিন নয়, ইবাদতেরও দিন। এই দিনে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। ভালো কাজের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি খুঁজি। ঈদের করণীয়গুলো পালন করা উচিত। বর্জনীয় কাজ থেকে দূরে থাকা দরকার।
ঈদ ত্যাগ, দয়া ও ধৈর্য শেখায়। ঈদ শুধু আনন্দের নয়, আল্লাহর রহমতের দিন। আল্লাহ আমাদের ঈদ এর গুরুত্ব বোঝার তৌফিক দিন। আমিন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url