ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস ক্ষুদ্রঋণের পথপ্রদর্শক

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো উদ্ভাসিত। তিনি শুধু একজন অর্থনীতিবিদ নন, বরং একজন সমাজ সেবক, উদ্ভাবক এবং মানবতার একজন মুখপাত্র। 



ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা এবং গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি মানুষের জীবনমান পরিবর্তনে একটি বৈপ্লবিক ভূমিকা রেখেছেন। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির যে পথ তিনি উন্মুক্ত করেছেন, তা আজকের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বিশ্বজুড়ে এক অনুকরণীয় মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে

আমরা তার জীবন কর্ম চিন্তাভাবনা এবং বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করব যা আমাদের চিন্তার জীবন তো সম্প্রসারণ এ সহায়ক হবে।

সূচিপত্রঃ ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস ক্ষুদ্রঋণের পথপ্রদর্শক

শৈশব ও শিক্ষা জীবন

Doctor Mohammad Yunus


ড. মোহাম্মদ ইউনুস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ছিল শিক্ষাপ্রিয় এবং মূল্যবোধ সম্পন্ন। তিনি প্রথমে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সফলভাবে শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন।

স্নাতকোত্তর শেষে তিনি Fulbright স্কলারশিপ পেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Vanderbilt University-তে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা তাঁকে দারিদ্র্য দূর করার নতুন চিন্তা দান করে। পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজ ও উন্নয়নের কথায় তাঁর আগ্রহ বাড়তে থাকে। এর ফলে তিনি ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন।

শৈশব কাটে চট্টগ্রামের প্রাণবন্ত পরিবেশে। তিনি ছিলেন খুব বুদ্ধিমান, কৌতূহলী ও চিন্তাশীল শিশু। প্রথমে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়েন। স্কুল জীবনে বিভিন্ন বিতর্ক, রচনা প্রতিযোগিতা ও পাঠচক্রে অংশ নিয়ে নিজেকে পরিচিত করেন। শিক্ষক ও বন্ধুদের কাছে তিনি একজন অনুপ্রেরণাদায়ক ছাত্র ছিলেন।

মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। কলেজে থাকাকালীনই তাঁর মেধা ও নেতৃত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। উচ্চ মাধ্যমিক শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে তিনি গভীর আগ্রহে অর্থনীতির পড়াশোনা করেন। আজ পর্যন্ত তার ফলাফল অত্যন্ত দুর্দান্ত। এছাড়াও, তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন।

আরো পড়ুনঃ শারমিন জাহান নামের অর্থ কি

স্নাতকোত্তর শেষে তিনি স্কলারশিপ পান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে Vanderbilt University-তে গিয়ে তিনি অর্থনীতিতে আরও পড়াশোনা করেন। শেষমেষ তিনি পিএইচডি ডিগ্রি পান। কিছুদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনা ও করেন। দেশের জন্য কাজ করতে মন চাইলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল উন্নয়ন অর্থনীতি। এই কাজের কারণে তিনি ক্ষুদ্রঋণ ও গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমে জনপ্রিয় হন। মার্কিন সমাজ ও অর্থনীতি দেখার ফলে তিনি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেন।

এই দীর্ঘ শিক্ষাজীবন তাঁকে একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদ করেন। একই সঙ্গে তিনি একজন দার্শনিক ও সমাজের চিন্তাবিদ। বিভিন্ন দেশের সমাজব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি বুঝতে পারেন যে, দারিদ্র্য দূর করার জন্য তত্ত্বের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োগের সমাধানও খুব জরুরি। এই শিক্ষা তাঁকে বিশ্বমানবতার কাজে নামতে উদ্বুদ্ধ করে।

ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা 

ক্ষুদ্রঋণের ধারণা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময়ে ড. ইউনুস এক জরিপ চালাতে গিয়ে দেখেন, খুব দরিদ্র গ্রামীণ মানুষরা ছোট ছোট ব্যবসা শুরু করতে পারে না কারণ তাদের কাছে পুঁজি নেই। তিনি বিভিন্ন জেলায় ঘুরে গরিবদের কথা শুনতে থাকেন এবং বুঝতে পারেন, সাধারণ ব্যাংকগুলো তাদের সাহায্য করতে পারছে না।

একদিন তিনি নিজের অর্থ দিয়ে ৪২ জন দরিদ্র নারীকে মোট ৮৫৬ টাকা ঋণ দেন। দেখা যায়, এই ছোট ঋণটি তাদের জীবন বদলে দেয়। তখন তিনি বুঝতে পারেন, দরিদ্রদের মধ্যে আত্মসম্মান আছে। তারা ঋণ নিয়ে সময়মতো ফেরত দিতে চায়। তাদের দরকার ছিল কেবল একটা সুযোগ।

ড. ইউনুসের এই ভাবনা ও ছোট উদ্যোগ ধীরে ধীরে একটি নতুন অর্থনৈতিক ধারণায় রূপ নেয়। তিনি এর নাম দেন "ক্ষুদ্রঋণ"। মূল ধারণা ছিল, ব্যাংকগুলো দরিদ্রদের খুঁজে বের করবে, তারা ব্যাংকের কাছে যাবে না। তিনি দেখেন, ক্ষুদ্র ঋণ মানবিক অর্থনীতির একটি কাজ। এর মাধ্যমে তারা নিজেরাই কাজ পেতে পারে, নারীদের ক্ষমতা বাড়ে এবং দারিদ্র্য কমে।

এই প্রকল্পের সফলতা দেখে ১৯৮৩ সালে সরকারিভাবে "গ্রামীণ ব্যাংক" প্রতিষ্ঠা হয়। এই ব্যাংক দরিদ্রদের জন্য, বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের জন্য, সহজ শর্তে ঋণ দেয়। ড. ইউনুসের এই ধারণা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে পরিচিত হয়। এটি বিশাল পরিবর্তন আনে উন্নয়ন নীতিতে।

গ্রামীণ ব্যাংক একটি অনন্য উদ্যোগ

গ্রামীণ ব্যাংক এর মূল লক্ষ্য ছিল দরিদ্র জনগণের কাছে সহজে, দ্রুত এবং জামানতহীন ঋণ পৌঁছে দেওয়া। ড. ইউনুস ১৯৮৩ সালে এই ব্যাংকটি সরকারিভাবে চালু করেন। এটি স্বাভাবিক ব্যাংক থেকে আলাদা। এখানে মূলত নারীদের জন্য ঋণ দেওয়া হয়। এর বড় সংখ্যক গ্রাহকই নারী। এই ব্যাংক নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা বাড়াতে অনেক সাহায্য করেছে।

ব্যাংকের কাজ ছিল পুরোপুরি গ্রামে গিয়ে। তারা গ্রামে গিয়ে মানুষকে ঋণ দিত এবং কিস্তি নেওয়া হত সরাসরি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সদস্যরা থাকত গুরুত্বপূর্ণ। এতে এক নতুন ধরণের গণতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি হয়। এটা সবাইকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়।

এই ব্যাংক ছিল উন্নয়নের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ আর নারীর ক্ষমতায়নের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। চিকিৎসা, স্কুলের জন্য অর্থ, ও সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর জন্য অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব সবই এই ব্যাংকের অংশ।

দ্রুতই এই ব্যাংক দেশের বাইরেও উদীয়মান হয়ে উঠল। অনেক দেশ এই মডেল অনুসরণ করে ক্ষুদ্র ঋণের কাজ শুরু করে। বিশ্ব ব্যাংক, জাতিসংঘসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এই ব্যাংককে দারিদ্র্য কমানোর বড় উদাহরণ বলে মান্যতা দেয়।

ড. ইউনুসের এই পরিকল্পনা দেখিয়েছে, দরিদ্রের আর্থিক সহায়তা শুধু নয়, তাদের সম্মান ও মর্যাদাও খুব জরুরি। এই জন্য গ্রামীণ ব্যাংক শুধু একটি ব্যাংক নয়। এটি এক সামাজিক পরিবর্তনের নাম।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও নোবেল পুরস্কার

ড. ইউনুস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কাজের জন্য ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এটা এক ঐতিহাসিক ঘটনা, কারণ এটি ছিল প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশি ও একটি প্রতিষ্ঠান একসাথে এই সম্মান পায়। নোবেল কমিটি বলেন, এই পুরস্কার তাদের দেয়া হয়, দরিদ্র মানুষদের ক্ষমতায়ন করতে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে অসাধারণ কাজের জন্য।

নোবেল পাওয়ার পরে ড. ইউনুসের কাজ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনায় আসে। তাকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন যেমন জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যেখানে তিনি দারিদ্র্য ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলেন। তার চিন্তা নতুন প্রজন্মের অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়নকর্মীদের প্রেরণা দেয়।

নোবেল পুরস্কার শুধু ব্যক্তির জন্য নয়, তা বাংলাদেশের গর্বের বিষয়ও। এতে বোঝা যায়, নতুন ভাবনা ও মানবিক কাজের মাধ্যমে উন্নয়ন সম্ভব। ড. ইউনুসের এই অর্জন ক্ষুদ্রঋণের ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী আলোচনা শুরু করে এবং উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করে।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা

নোবেল পুরস্কার ছাড়াও, ড. মোহাম্মদ ইউনুস তাঁর অসাধারণ কাজের জন্য বহু সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি প্রায় ৬০টির বেশি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন, যা তাঁর কাজের বৈশ্বিক গুরুত্বকে বোঝায়।

২০০৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তাকে দেন "প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম"—যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বেসামরিক পুরস্কার। এরপর ২০০৯ সালে তাকে দেয়া হয় "কংগ্রেসিয়াল গোল্ড মেডেল"—আরেকটি খুব সম্মানজনক স্বীকৃতি।

তাঁর নাম এসেছে টাইম ম্যাগাজিনের "বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তি"-এর তালিকায়। ফোর্বস ম্যাগাজিন তাকে একজন সেরা সমাজ উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি ফ্রান্সের "লেজিওন অব অনার", ভারতের "ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার" এবং কাতারের "শেখ হামাদ পুরস্কার ফর ট্রান্সলেশন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং" পেয়েছেন।

আআআআরো পড়ুনঃ মিনহাজ নামের অর্থ কি 

বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়া হয়েছে। হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসসহ ৫০টির বেশি শীর্ষ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

এই সব পুরস্কার আর সম্মাননা শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়। এটি তাঁর মানবিক অর্থনীতি ও সামাজিক শান্তির কাজে বৈশ্বিক স্বীকৃতি।

সমালোচনা ও বিতর্ক: চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি

তাঁর জীবন পুরোপুরি সহজ ছিল না। ছোট ঋণের মডেল বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পায়, তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে নানা বিতর্ক হয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ সুদের হার, ঋণগ্রহীতাদের মানসিক চাপ আর দারিদ্র্য কমানোর ব্যাপারে এই ব্যবস্থা অনেকের প্রশ্নের মুখে পড়ে। বেশ কিছু গবেষক ও উন্নয়ন কর্মী বলছেন, ক্ষুদ্রঋণ দরিদ্রদের আরও ঋণের ফাঁদে ফেলে দেয়। এর ফলশ্রুতি হিসেবে ভারতের কিছু স্থানে ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে, যা ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশেও তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ২০১০ সালের পরে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম ও তাঁর ভূমিকা নিয়ে রাষ্ট্রের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক আদেশে তাঁকে ব্যাংক পরিচালনা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশ-বিদেশে আলোচনা ও সমালোচনা হয়। কেউ বলেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, আবার অনেকে বলেন, আইন অনুযায়ী এই অবসর গ্রহণ সঙ্গত ছিল।

তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকি আর বিদেশি অনুদান অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। তবে এসব অভিযোগের সঠিক প্রমাণ কোনও পক্ষের কাছে এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার মূল লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্য কমিয়ে সমাজে পরিবর্তন আনা।

সব বিতর্ক আর চ্যালেঞ্জের মাঝেও তাঁর কাজ, বিশ্বজোড়া প্রভাব ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে অনেক উপরে তুলে নিয়ে গেছে। জীবনজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়ে তিনি পিছিয়ে যাননি। বরং নতুন আরও কিছু উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যান। এগুলো তাঁকে আরও শক্তিশালী ও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।

শেষ কথা

ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। তিনি মূলধারার অর্থনৈতিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন পথ দেখিয়েছেন—একটি মানবিক, সকলের জন্য সমতা বজায় রাখা, ও ন্যায়ের ভিত্তিতে গড়া অর্থনীতির পথ। তাঁর ক্ষুদ্রঋণের ধারণা কেবল আর্থিক নয়, এটি ছিল সামাজিক পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। তিনি দেখিয়েছেন, দরিদ্র মানুষকে দয়ার দৃষ্টিতে দেখার বদলে, যদি তাদের সম্ভাবনায় দেখা হয়—তাহলে শুধু আর্থিক মুক্তিই নয়, টেকসই উন্নয়নের ভিত্তিও তৈরি হয়।

বিশ্ব যখন উন্নয়ন মানছিল শুধুই GDP ও বিনিয়োগের মাধ্যমে, তখন ড. ইউনুস বললেন, প্রকৃত উন্নয়নের মানদণ্ড হলো মানুষের ক্ষমতায়ন। তাঁর ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে লাখো নারী স্বাবলম্বী হয়েছে, অনেক পরিবার দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে, শিশুরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা পেয়েছে। এখন আমরা দেখছি একটা নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতা, যেখানে “অসহায় দরিদ্র” নয়, বরং “সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা” বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।

তাঁর মডেল শুধু বাংলাদেশে নয়, বিখ্যাত হয়েছে অনেক দেশে। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়াসহ উন্নত দেশগুলো—তাঁর পদ্ধতিকে অনুসরণ করেছে। জাতিসংঘ ও অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা তাঁর ভাবনাকে গ্রহণ করে দারিদ্র্য দূর করতে। তাঁর “সামাজিক ব্যবসা” ধারা নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে—ব্যবসায় লাভের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক দায়িত্ত্বও থাকতে পারে।

ড. ইউনুস শিক্ষা দিয়েছেন, বড় পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন বড় সম্পদ বা বড় প্রতিষ্ঠান নয়, দরকার শালীন সাহস, মানবিকতা, এবং একটি ছোট পদক্ষেপে বিশ্বাস। তাঁর জীবন দেখায় যে, কেউ—যেকোনো স্থান থেকে—সঠিক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে পারে। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেই বদলে যেতে পারে।

এই শতাব্দীতে যখন ধনী আর গরিবের মধ্যের ফারাক বাড়ছে, তখন ড. ইউনুসের চিন্তা এবং কাজ আমাদের সামনে আলোকের মতো। তাঁর জীবন শুধু গল্প নয়, এটি এক ট্রেস। এক আন্দোলন। এক বিশ্বাস, যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

অমর হয়ে থাকবে মানুষের অন্তরে একটি নাম"ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস"

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url