কুরবানীর পশুর বৈশিষ্ট্যসমূহ
কোরবানি ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি হজের সময় মুসলিম উম্মাহর জন্য জবাবদিহি। কোরবানির পশু নির্বাচন করতে গেলে কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভুল বা অপ্রয়োজনীয় পশু কোরবানি হয়তো গ্রহণযোগ্য হবে না।
অনেক সময় আমরা জানার অভাবেই এমন পশু কোরবানি করি যা শরীয়তের মানদণ্ডে মানায় না। তাই এই লেখায় আলোচনা থাকবে—একটি কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত, কোন পশু গ্রহণযোগ্য নয় এবং মুসলমান হিসেবে আমাদের কি দেখে পশু বাছাই করতে হবে।
সুচিপত্রঃ কোরবানির পশুর গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য
- কোরবানির পশু নির্বাচন ইসলামী শরীয়তের গুরুত্বপূর্ন শর্ত
- শারীরিক গঠন সুস্থতা ও শক্তির লক্ষণ
- কোরবানির পশুর বয়স
- স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা
- নিখুঁত শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
- পশুর আচরণ
- কোরবানির পশুর মূল্য ইসলামি ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি
- পশু নির্বাচনে প্রতারণা এড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ
- সুন্নত অনুসারে পশু কেনা ও কোরবানির নিয়ত
- শেষ কথা
কোরবানির পশু নির্বাচন ইসলামী শরীয়তের গুরুত্বপূর্ন শর্ত
✅ কোরবানির জন্য বৈধ পশুগুলি
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কোরবানির জন্য নিম্নলিখিত পশুগুলি অনুমোদিত:
- উট : কমপক্ষে ৫ বছর বয়সী হতে হবে।
- গরু, ষাঁড়, মহিষ : ২ বছর বয়স পূর্ণ হতে হবে।
- ছাগল, ভেড়া, দ্রুম্বা : এক বছর বা দেখতে এক বছর বয়সী মনে হলেও চলবে।
❌ কোরবানির জন্য উপযুক্ত নয় এমন পশুগুলি
- এক চোখ অন্ধ বা খুব দুর্বল চোখের পশু
- এক পায়ে দাঁড়াতে অক্ষম বা খুঁড়িয়ে চলা পশু
- খুব দুর্বল বা অসুস্থ পশু
- কান, লেজ বা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ কাটা পশু
- জন্মগত ত্রুটি থাকায় সুস্থভাবে চলাফেরা করতে অক্ষম পশু
শারীরিক গঠন সুস্থতা ও শক্তির লক্ষণ
কোরবানির পশু অবশ্যই সুস্থ দেহ শক্তিশালী ও সুন্দর দেখাবে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক খেয়াল রাখতে হবে:
- চোখ পরিষ্কার, উজ্জ্বল হওয়া জরুরি।
- চামড়া উজ্জ্বল ও পরিষ্কার থাকতে হবে; খোসপাঁচড়া বা অন্য রোগ থাকবে না।
- চলাফেরা স্বাভাবিক, খুঁড়িয়ে না চলে এমন পশু চয়ন করতে হবে।
- খাবার খাওয়ার রীতি স্বাভাবিক কি না সেটা দেখুন।
- ওজন ও শরীরের গঠন বয়স অনুযায়ী ঠিকঠাক থাকা দরকার, পেশীযুক্ত দেহ ভালো
এসব গুণ পশুর সুস্থতা ও কোরবানির জন্য উপযোগিতা নিশ্চিত করে।
কোরবানির পশুর বয়স
ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট বয়সের পশু কোরবানি করতে হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) স্পষ্ট বলেছেন:“তোমরা ‘মুসিনন’ (পরিপূর্ণ বয়সের) পশু কোরবানি দাও। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে ‘জাযা’ (এক বছর পূর্ণ হলেও ছোট) ছাগল দিয়ে করো।”
সহীহ মুসলিম
উটের জন্য কমপক্ষে ৫ বছর।
গরুর জন্য কমপক্ষে ২ বছর।
ছাগল বা ভেড়ার জন্য কমপক্ষে ১ বছর। তবে, ৬ মাসের ছাগল যদি দেখতে ১ বছরের মতো হয়, তাও চলে।
বয়স যাচাই করার জন্য দাঁতের দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। সাধারণত, দুই দাঁত পড়ে মানে বয়স শেষ।
স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা
স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে তাজা ও সুস্থ পশু নির্বাচন করুন। পশুর সুস্থতা বোঝার জন্য দেখে নিন,
- পশু নিয়মিত চারণ করে কি না।
- খাবার খেতে ইচ্ছা দেখায় কি না, তা লক্ষ্য করুন।
- স্বাভাবিক শ্বাস নিতে পারছে কি না সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
- ত্বকে র্যাশ, ফোড়া বা ফাটচেরা আছে কিনা, তাও দেখুন।
- পশম উজ্জ্বল ও ঝরে না, এমন পশুরাই সুস্থ।
রোগাক্রান্ত পশু কোরবানির জন্য মানানসই নয়। শরীয়ত অনুযায়ী তা গ্রহণযোগ্য হবে না। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পশু বাছাইই হল প্রথম ধাপ।
নিখুঁত শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পূর্ণ ও নিখুঁত থাকা জরুরি
কোরবানির পশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ
আরো পড়ুনঃ সুখী দাম্পত্য জীবনের কিছু বৈশিষ্ট্য ।
- চোখ, কান, শিং, লেজ ঠিকঠাক থাকতে হবে।
- জন্মগতভাবে অঙ্গ না থাকা, কাটা বা বিকৃতি থাকলে সেটি গ্রহণযোগ্য নয়।
- দাঁত থাকা প্রয়োজন, না হলে পশু খাবার খেতে পারবে না।
- পায়ে যদি কোন প্রকার সমস্যা থাকে যাতে পশু হাঁটাচলা করতে পারে না। তা গ্রহণযোগ্য হবে না
একটি পশুর নিখু্ত দেহের সুন্দরতা ও সম্পূর্ণতা কোরবানির জন্য একান্ত আবশ্যক।
পশুর আচরণ
পশুর আচরণ যেন স্বাভাবিক হয়। মানুষের সামনে ভীত না হয়। খুব বেশি উত্তেজিত হলে বা দৌড়ানোর চেষ্টা করলে তা বিপজ্জনক হতে পারে। এমন পশু কোরবানি প্রক্রিয়াতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
এ ধরনের আচরণ যেন না দেখা যায়, সে জন্য একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি পশুর মনোভাব পরীক্ষা করে নিতে পারেন।
কোরবানির পশুর মূল্য ইসলামি ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি
বেশির ভাগ সময় আমরা মূল্য দেখে পশু কিনি, কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে তার মান ঠিক মত দেখছি না। মনে রাখতে হবে:
- দামি পশু মানেই উপযুক্ত কোরবানির পশু না।
- পশু কেনার আগে তার স্বাস্থ্য, বয়স ও দেহের গঠন ভালো করে দেখতে হবে।
- শুধু বাহ্যিক রূপ নয়, ইসলামী নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, সেটাই মূল।
পশু নির্বাচনে প্রতারণা এড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ
বর্তমানে বেশ কিছু বাজারে ভেজাল ও প্রতারণা বেড়ে গেছে। অনেক পশুকে বড় দেখাতে দাঁত ঘষে খাটো করে দেয় বা ইনজেকশন দিয়ে ফুলিয়ে ফেলার চেষ্টা কর হয়। তাই সচেতনতা অপরিহার্য।
প্রথমে পশুর দাঁত দেখে বয়স নিশ্চিত করতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াও প্রয়োজন।
কোরবানির পশু কেনার পর দুই থেকে তিন দিন নিজ দায়িত্বে রাখুন। এর মাধ্যমে পশুর প্রকৃত বয়স ও স্বাস্থ্য নির্ভরযোগ্যভাবে জানা যাবে।
সুন্নত অনুসারে পশু কেনা ও কোরবানির নিয়ত
রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে কোরবানি করতেন এবং সাহাবিরাও খুব সতর্কতার সাথে সব কিছু করতেন, যেন অন্তরের শুদ্ধতা বজায় থাকে। আমাদেরও তাই কর উচিত:
- কোরবানি করার সময় আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে।
- নেক উদ্দেশ্য ও মনোভাব ঠিক করে নিতে হবে।
- পশুকে আঘাত না করে, যত্নসহকারে দেখাশোনা করা।
- পশুকে ভালোভাবে লালনপালন ও যত্ন নেওয়া জরুরি।
শেষ কথা
একটি কোরবানির পশু শুধু দেখতে সুন্দর নয়, বরং শরীয়তের সব মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। বয়স, স্বাস্থ্য, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, আচরণ—সব কিছু মিলিয়ে উপযুক্ত পশু বেছে নিতে হয়। এই পবিত্র ইবাদত করে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি এবং সামাজিক দায়িত্বও পালন করি। তাই পশু নির্বাচনে সতর্কতা ও সম্মান দেখানো জরুরি।
এবারের কোরবানিতে আমরা মনোযোগ দিয়ে ঠিক মতো পশু নির্বাচন করে আল্লাহর নিকট দোয়া করি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url