বাইনারি ট্রেডিং, ফরেক্স ট্রেডিং ও ক্রিপ্টো ট্রেডিং: কোনটা বেশি নিরাপদ এবং লাভজনক
পেশাজীবি বলুন আর বেকার বলুন , শিশু বলুন আর বৃদ্ধ বলুন, সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ বলুন আর পাগল বলুন। সবারই একটা মিল আছে আর সেটা হলো সবাই "টাকা চিনে, টাকাকে বুঝে, টাকার প্রয়োজনীতা বুঝে"।
পোস্ট সুচিপত্রঃ বাইনারি ট্রেডিং, ফরেক্স ট্রেডিং ও ক্রিপ্টো ট্রেডিং: কোনটা বেশি নিরাপদ এবং লাভজনক
- শুরুতেই: কোন মার্কেট বেছে নিবেন?
- বাইনারি ট্রেডিং, ফরেক্স ট্রেডিং ও ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ের মূল পার্থক্য
- নতুন ট্রেডারদের জন্য ব্যক্তিগত পরামর্শ
- মার্কেট অ্যানালাইসিস শেখার গুরুত্ব
- ডেমো একাউন্টে শেখার গুরুত্ব
- গাইডলাইন নেওয়ার সময় যা মনে রাখবেন
- লেখকের শেষ কথা
শুরুতেই: কোন মার্কেট বেছে নিবেন?
অনেক ট্রেডারই একটা প্রশ্ন করে থাকে, যে বাইনারি ট্রেডিং, ফরেক্স ট্রেডিং, ক্রিপ্টো ট্রেডিং এই তিনটা ট্রেডিং এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মার্কেট কোনটা। আবার অনেকে এই তিনটার মধ্যে কোনটা বেছে নিবে এটা নিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকে।
আজকে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে পরিষ্কার করে আলোচনা করবো। আপনি যদি ট্রেডিং শিখতে চান এবং ভবিষ্যতে একজন ভালো ট্রেডার হতে চান, তাহলে অবশ্যই ভিডিওটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে দেখবেন। কারণ এই ভিডিওর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার জন্য কোন ট্রেডিং মার্কেটটি সবচেয়ে বেশি নিরাপদ এবং লাভজনক। এবং আপনি কোন মার্কেটটা ফোকাস করবেন। তো চলুন শুরু করা যাক।বাইনারি ট্রেডিং, ফরেক্স ট্রেডিং ও ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ের মূল পার্থক্য
সবার
আগে আমরা বুঝে নিই
যে বাইনারি ট্রেডিং, ফরেক্স ট্রেডিং এবং ক্রিপ্টো ট্রেডিং—এই তিনটা ট্রেডিংয়ের
মধ্যে মূল পার্থক্যটা কোথায়।
বাইনারি
ট্রেডিং কী?
বাইনারি
ট্রেডিং মানে হচ্ছে নির্দিষ্ট
একটি টাইম ফ্রেমের মধ্যে
আপনি প্রেডিকশন করবেন মার্কেট উপরে যাবে না
নিচে যাবে। এবং আপনি যদি
আপনার প্রেডিকশন অনুযায়ী সফল হন তাহলে
আপনি প্রফিট করবেন। আর যদি না
হন তাহলে আপনি আপনার সম্পূর্ণ
ইনভেস্ট লস করবেন।
বাইনারি
ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি
এখন
বাইনারি ট্রেডিংয়ে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা
সেটা হলো, এখানে আপনি
আপনার রিস্ককে খুব একটা কনট্রোল
করতে পারেন না। কারণ আপনি
এক মিনিট বা দুই মিনিটের
জন্য ট্রেড নিচ্ছেন এবং এই ট্রেডটা
যদি লস হয় তাহলে
আপনি সম্পূর্ণ ইনভেস্ট হারাবেন। তার মানে এখানে
আপনি স্টপলস দিতে পারছেন না।
আপনি প্রফিট টার্গেট সেট করতে পারছেন
না। এ কারণে বাইনারি
ট্রেডিং অনেক বেশি রিস্কি
এবং নতুনদের জন্য মোটেও নিরাপদ
না।
ফরেক্স ট্রেডিং: বিশ্বের সবচেয়ে বড় মার্কেট
ফরেক্স
ট্রেডিং কী?
ফরেক্স
ট্রেডিং হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মার্কেট, যেখানে
প্রতিদিন ট্রিলিয়ন ডলারের উপরে লেনদেন হয়।
এখানে আপনি মেজর কারেন্সি
পেয়ারে ট্রেড করতে পারেন, যেমন
EUR/USD, GBP/USD, USD/JPY ইত্যাদি।
ফরেক্স
ট্রেডিংয়ের সুবিধা ও ঝুঁকি
এখানে আপনি চাইলে স্টপ লস দিতে পারবেন, টেক প্রফিট দিতে পারবেন, রিস্ক টু রিওয়ার্ড রেশিও অনুযায়ী ট্রেড নিতে পারবেন। এবং আপনি লিভারেজ ব্যবহার করে কম মূলধনে বড় ট্রেড নিতে পারেন। তবে এটা ভালোভাবে বুঝে ট্রেড করতে হবে, না হলে লিভারেজ উল্টো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আরো পড়ুনঃ স্কিল ছাড়াই অনলাইন ইনকাম, রিভিউ লেখা ও কপি-পেস্ট কাজ করে আয় করুন সহজে
তবে ফরেক্স মার্কেটে যেহেতু লিকুইডিটি অনেক বেশি, তাই এখানে মার্কেট অনেক সময় খুব বেশি ভোলাটাইল হয়। মানে হঠাৎ করে বড় বড় মুভমেন্ট হয়ে যায় যেটা নতুন ট্রেডারদের জন্য অনেক সময় ভয়ানক হতে পারে। আর এখানেই আসে ট্রেনিং এবং ডিসিপ্লিনের ব্যাপারটা। আপনি যদি সঠিকভাবে ট্রেডিং শিখেন, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ফলো করেন এবং মার্কেট অ্যানালাইসিস করতে পারেন তাহলে ফরেক্স মার্কেট আপনার জন্য হতে পারে একটি লাভজনক প্ল্যাটফর্ম।
ক্রিপ্টো ট্রেডিং: দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা মার্কেট
ক্রিপ্টো
ট্রেডিং কী?
ক্রিপ্টোকারেন্সি
মার্কেট দিনে দিনে অনেক
জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে
আপনি বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, ডজকয়েন, শিবা ইনু ইত্যাদি
অসংখ্য কয়েনে ট্রেড করতে পারেন। এই
মার্কেট ২৪ ঘণ্টা খোলা
থাকে। মানে আপনি যেকোনো
সময় ট্রেড করতে পারেন।
ক্রিপ্টো
ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি ও সুযোগ
যেহেতু
এখানে মানুষজন অনেক বেশি আগ্রহী,
তাই অনেক সময় এখানে
খুব হাই মুভমেন্ট দেখা
যায়—অর্থাৎ বড় প্রফিট যেমন
পাওয়া যায়, তেমনি বড়
লসও হতে পারে। নতুন
ট্রেডাররা অনেক সময় হাইপে
পড়ে ট্রেড করে ফেলে যার
কারণে তারা বেশি ক্ষতির
সম্মুখীন হয়।
আরো পড়ুনঃ ঘরে বসে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে কর্পোরেট লেভেলের আয় করুন – আজই শুরু করুন সফল ক্যারিয়ার গড়ার যাত্রা!
তবে
এই মার্কেটে আপনি চাইলে স্পট
ট্রেড করতে পারেন, চাইলে
ফিউচারস ট্রেড করতে পারেন। আবার
চাইলে আপনি ডলার কস্ট
অ্যাভারেজিং এর মাধ্যমে ইনভেস্ট
করতে পারেন।
নতুন ট্রেডারদের জন্য ব্যক্তিগত পরামর্শ
তবে
আমি যদি আমার ব্যক্তিগত
অভিজ্ঞতা থেকে বলি, তাহলে
আমি বলবো একজন নতুন
ট্রেডার হিসেবে সবচেয়ে নিরাপদ ট্রেডিং মার্কেট হচ্ছে ফরেক্স মার্কেট। কারণ এখানে আপনি
রিস্ক কনট্রোল করতে পারেন, আপনি
চাইলে ছোট লটে ট্রেড
করতে পারেন, স্টপ লস দিতে
পারেন, রিস্ক টু রিওয়ার্ড হিসাব
করে ট্রেড নিতে পারেন।
আপনি
চাইলে ডেমো একাউন্টে ট্রেড
প্র্যাকটিস করতে পারেন। যেটা
বাইনারি মার্কেটে অনেকটাই সীমিত, আর ক্রিপ্টো মার্কেটেও
এই সুযোগটা কম।
ফরেক্স
মার্কেট আপনাকে শেখার সুযোগ দেয়, ধৈর্য ধরার
সুযোগ দেয়, এবং ধাপে
ধাপে নিজেকে তৈরি করার সুযোগ
দেয়।
আরো পড়ুনঃ টিকটকে মনিটাইজেশন কিভাবে চালু করতে হয় তার A2Z
কিন্তু
এর মানে এই নয়
যে আপনি বাইনারি বা
ক্রিপ্টোতে সফল হতে পারবেন
না। আপনি যদি যথেষ্ট
জ্ঞান রাখেন, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ফলো করেন এবং
ইমোশন কন্ট্রোল করতে পারেন তাহলে
আপনি যেকোনো মার্কেটেই প্রফিট করতে পারবেন।
সব মার্কেটেই প্রফিট করার সুযোগ আছে,
আবার লস করারও ঝুঁকি
আছে।
কিন্তু
একজন নতুন ট্রেডার হিসেবে
যেটা বেশি ইমপোর্টেন্ট সেটা
হলো শেখা। শেখা, অনুশীলন করা এবং সময়
দেওয়া। আর ফরেক্স মার্কেটই
সেই জায়গা যেখানে আপনি কম রিস্কে
বেশি শেখার সুযোগ পাবেন।
মার্কেট অ্যানালাইসিস শেখার গুরুত্ব
আরেকটা
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আপনি
যেই মার্কেটেই ট্রেড করুন না কেন,
আপনাকে অবশ্যই মার্কেট অ্যানালাইসিস শিখতে হবে। আপনি যদি
মার্কেট বুঝে ট্রেড না
করেন তাহলে আপনি যে মার্কেটেই
যান না কেন আপনি
লস করবেন।
একইভাবে,
ফরেক্স মার্কেটেও যদি আপনি নিউজ,
টেকনিক্যাল, ফান্ডামেন্টাল কিছুই না বোঝেন, তাহলে
আপনি অন্ধভাবে ট্রেড করবেন এবং লস করবেন।
আবার
অনেকেই ভাবে ক্রিপ্টো মানেই
শুধু কয়েন কিনে রাখলেই
হবে। কিন্তু এই মার্কেটেও যদি
আপনি ঠিক সময় এন্ট্রি
না নেন, ঠিক সময়
এক্সিট না করেন, তাহলে
প্রফিটের বদলে আপনি লসে
পড়বেন।
তাই
মার্কেট যেটাই হোক না কেন,
আপনাকে শেখার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। আপনি
ইউটিউব থেকে, কোর্স থেকে, মেন্টরদের কাছ থেকে শিখতে
পারেন।
আজকাল
অনেক ভালো ভালো ট্রেডিং
প্ল্যাটফর্ম এবং কমিউনিটি আছে
যেখান থেকে আপনি গাইডলাইন
নিতে পারেন।
আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো
ধৈর্য। আপনি একদিনে লাখপতি
হতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিদিন
যদি একটু একটু করে
শেখেন, তাহলে একদিন নিশ্চিতভাবে সফল হবেন।
ডেমো একাউন্টে শেখার গুরুত্ব
আরেকটা
ব্যাপার হলো, আপনি যেই
মার্কেটেই যান না কেন,
প্রথমেই যেন রিয়েল একাউন্টে
ট্রেড শুরু না করেন।
অনেকেই
দেখি ট্রেডিং সম্পর্কে একটু জানলেই সরাসরি
ডিপোজিট করে রিয়েল ট্রেড
শুরু করে দেয়।
এতে
করে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি
হয় সেটা হলো আপনি
অভিজ্ঞতা ছাড়া টাকাটা হারিয়ে
ফেলেন।
আপনি
যদি শুরুতে ডেমো একাউন্টে প্র্যাকটিস
করেন, নিজের একটা স্ট্র্যাটেজি তৈরি
করেন, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ফলো করেন, তাহলেই
আপনি রিয়েল ট্রেডে সফল হবেন।
আবার
অনেকেই অন্যের ট্রেড কপি করে, সিগন্যাল
ফলো করে ট্রেড করে।
এতে করে কিছুদিন ভালো
হলেও এক সময় গিয়ে
নিজে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায়
লস করে।
তাই
আপনি যেই মার্কেটই বেছে
নিন না কেন, আগে
শেখা, পরে প্র্যাকটিস, তারপর
রিয়েল ট্রেড।
একটা
কথা মনে রাখবেন, ট্রেডিং
একটা স্কিল — এটা জাদু না।
এটা শিখতে সময় লাগে।
আপনি
যদি প্রতিদিন ১-২ ঘণ্টা
সময় দেন শেখার জন্য,
তাহলে ৩-৬ মাসের
মধ্যে আপনি ভালো একটা
লেভেলে চলে আসতে পারবেন।
গাইডলাইন নেওয়ার সময় যা মনে রাখবেন
আরেকটা
জিনিস হলো, আপনি যদি
নিজে নিজে শেখেন তাহলে
অনেক সময় ভুল হতে
পারে, বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।
সে ক্ষেত্রে আপনি চাইলে কারো
গাইডলাইন নিতে পারেন। কিন্তু
গাইডলাইন নেওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন
যেন সে ব্যক্তি আসলেই
অভিজ্ঞ হয়, যার রিয়েল
ট্রেডিং অভিজ্ঞতা আছে।
আজকাল
অনেকেই শুধু ভিডিও বানিয়ে
বা পোস্ট দিয়ে মানুষকে শেখানোর
চেষ্টা করে, কিন্তু নিজের
কোনো রিয়েল ট্রেডিং ব্যাকগ্রাউন্ড নাই।
তাদের
কাছ থেকে আপনি হয়তো
কিছু শিখতে পারবেন, কিন্তু গভীর জ্ঞান পাবেন
না।
তাই
শেখার ক্ষেত্রে সঠিক উৎস বেছে
নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি
যদি ভালোভাবে শেখেন, ধৈর্য ধরে প্র্যাকটিস করেন,
তাহলে আপনি যেকোনো মার্কেটে
সফল হতে পারবেন।
কিন্তু
মনে রাখবেন, তাড়াহুড়ো করে কখনো লাভ
হয় না।
ট্রেডিংয়ে
তাড়াহুড়ো মানেই লস।
ধাপে
ধাপে, পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে
হবে। তাহলেই আপনি সেফ থাকবেন,
লাভে থাকবেন।
লেখকের শেষ কথা
সবশেষে
একটা কথাই বলবো, আপনি
যেই মার্কেটেই ট্রেড করুন না কেন,
আগে নিজেকে প্রস্তুত করুন।
আপনি
যদি নিজের উপর আত্মবিশ্বাস গড়ে
তুলতে পারেন, নিজের ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করতে পারেন, তাহলে
আপনি এই ট্রেডিং জার্নিতে
সফল হবেনই।
সময়
দিন শেখার পেছনে, মনোযোগ দিন প্র্যাকটিসে।
প্রফিট
আপনাকে খুঁজে নেবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url